এস. এম. তারেক :

দিনের পর দিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে কক্সবাজার সদরের বৃহত্তর ঈদগাঁওতে। টানা বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানির কারণে ক্রমশঃ বাড়ছে ভাঙ্গন এবং পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে ভাঙ্গণ এলাকার। গত দু’দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুত সরবরাহ এবং ঈদগাঁও’র সাথে ফরাজীপাড়া এবং পোকখালীর সড়ক যোগাযোগ।

৫ জুলাই সকাল ১০ টা’র দিকে জেলা প্রশাসক আলী হোসেনের নেতৃত্বে একটি টীম ঈদগাঁও ফরাজীপাড়া টু পোকখালী সড়কের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শণ করেছেন। এসময় সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম রহিম উল্লাহ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম, ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মোঃ খায়রুজ্জামান, ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম ও অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তাগণ তার সাথে ছিলেন। জালালাবাদের ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান রাশেদের নেতৃত্বে ইউপি সদস্য আরমান উদ্দিন, সেলিম উল্লাহ, মোক্তার আহমদ, মনজুর আলম, নুরুল আলম জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পরিদর্শণে আসা টীমকে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ দেন। এসময় এলাকাবাসীদের মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম, বিগত নির্বাচনে ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জামায়াত নেতা সেলিম উল্লাহ জিহাদী , সাবেক ছাত্রনেতা রাশেদুল হক, শফিকুল ইসলাম, আবছার কামাল এবং আবদুর রহিমসহ শ’খানেক গ্রামবাসী প্রতিনিধিদলের কাছে তাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। অপরদিকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে অপর একটি টীম জালালাবাদের মোহনভিলা, পালাকাটা, বাঁশঘাটা, ঈদগাঁও বাজার এবং ঈদগাঁও ইউনিয়নের ভোমরিয়াঘোনাসহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ বেশ কয়েকটি স্থান পরিদর্শণ করেছেন বলে জানা গেছে।

ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ জানিয়েছেন, দু’একদিনের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে সরকারীভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। সূত্র জানায়, জনগণের দুর্ভোগ কমাতে ও ঈদগাঁও ফরাজীপাড়া টু পোকখালীতে সড়ক যোগাযোগ পুণঃপ্রতিষ্টিত করতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যান মিলে জরুরী ভিত্তিতে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ নেবে। গতকাল দুপুরেও একই সড়কের রাবার ড্যাম পয়েন্টের ব্রীজের সন্নিকটস্থ স্থানটিও বন্যার পানির চাপে ভেঙ্গে গেছে। এ নিয়ে সড়কটির ৩টি অং]শ বন্যার পানিতে ভেঙ্গে গেল।

প্রসংগত ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হওয়ায় ৩ জুলাই দুপুরে ঈদগাঁও নদীর (জালালাবাদ অংশে) রাবার ড্যাম সংলগ্ন এলাকায় বেড়িবাধের বিরাট একটি অংশ ( মনজুর মেম্বারের ঘাটা পয়েন্ট) ভেঙ্গে যায়। ওই ভাঙ্গা অংশ দিয়ে প্রবল ¯্রােতে বন্যার পানি অনুপ্রবেশ করতে থাকলে পানির চাপে ঈদগাঁও – ফরাজী পাড়া-পোকখালী সড়কের ৩টি অংশ ভেঙ্গে পড়ে। পানির তোড়ে সে থেকে অদ্যবধি একের পর এক ডুবে যাচ্ছে জালালাবাদ ইউনিয়নের প্রায়সব গ্রাম। বর্তমানে ওই ইউনিয়নের দঃ লরাবাক, পূর্ব লরাবাক, মোহনভিলা, পালাকাটা, মাছুয়াপাড়া, তেলীপাড়া ছাতিপাড়া, বাহারছড়া ও ফরাজীপাড়া গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। উনুন জ্বালাতে না পেরে পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া বসতঘরের লোকজন বর্তমানে তীব্র খাদ্য ও পানীয় জলের সংকটে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা ইমরুল হাসান রাশেদ।

চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৪/৫হাজার মানুষ গত দু’দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য জরুরী ভিত্তিতে খাদ্য ও পানীয় জলের প্রয়োজন। বৃষ্টি এবং ঢলের পানির কারনে বাজারের বিভিন্ন অলিগলিগুলো গতকালও কোমর সমান পানির নিচে নিমজ্জিত ছিল। বন্যার পানি অনুপ্রবেশ করায় গতকালও বন্ধ ছিল বাজারের অধিকাংশ দোকান-পাট। এছাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে ঈদগাঁও ভূমি অফিস, ঈদগাহ্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, ঈদগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং জালালাবাদ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ অনেক প্রতিষ্টান।

বন্যার পানিতে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে ঈদগাঁও ইউনিয়নের দরগাহপাড়া, ভোমরিয়াঘোনা, কালিরছড়া, ভাদিতলাসহ বহু গ্রাম। চৌফলদন্ডী আ’লীগের সাবেক সভাপতি হাবিব উল্লাহ জানান, ওই ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া, নতুন মহাল, কালু ফকিরপাড়া, উত্তর পাড়া, সিকদার পাড়া এবং মাইজপাড়ায় সাগরের জোয়ারের পানি, বৃষ্টির পানি এবং ঈদগাঁও’র রাবার ড্যামের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে অনুপ্রবেশ করা ঢলের পানিতে গ্রামগুলো কমবেশী প্লাবিত হয়েছে। পোকখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ জানান, ওই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম বন্যা, জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। আগে থেকে ক্ষতিগ্রস্থ গোমাতলী গ্রামের অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়েছে বলেও তিনি জানান। ভেঙ্গে পড়েছে ওই ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। অপর দু’উপকুলীয় ইউনিয়ন ভারুয়াখালী ও ইসলামপুরের নি¤œাঞ্চলও বন্যা, বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানির ৩/৪ ফুট নিচে তলিয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

ইসলামাদ ইউনিয়নেও বন্যার পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে বসতঘর এবং রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন, ইউপি চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক। এরিপোর্ট লিখা পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে কোনপ্রকার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়নি।

অপরদিকে বার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী শনিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বৃহত্তর ঈদগাঁও’র মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। বন্যা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার কারনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা। অনেক অভিভাবক ফোন করে এ প্রতিনিধিকে এ বিষয়ে তাদের উৎকন্ঠার কথা জানিয়েছেন। জালালাবাদের দক্ষিণ লরাবাক গ্রামের বাসিন্দা শওকত আলম মুঠোফোনে জানান, ঈদগাহ্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে তার মেয়ে রেসমিন আক্তার ৭ম শ্রেণিতে পড়ে। আাগামী শনিবার থেকে অনুষ্ঠিতব্য বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় সড়কের ৩টি বড় বড় ভাঙ্গণ পেরিয়ে কিভাবে যাওয়া আসা করবে তা তিনি মহাচিন্তায় পড়ে গেছেন। তাছাড়া ঘরে বন্যার পানি উঠে যাওয়াতে অন্যরকম দুর্ভোগে পড়েছেন তিনি। এতবস্থায়, বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষকে।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার লোকজন সরকারের পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণ তৎপরতা শুরুর দাবী জানিয়েছে। জালালাবাদের ২নং ওয়ার্ড আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিনসহ ওই এলাকার বিশিষ্টজনেরা অতিদ্রুত বেড়িবাধের ক্ষতিগ্রস্থ অংশ এবং ঈদগাঁও টু ফরাজীপাড়া সড়কের ভাঙ্গা অংশগুলো দ্রুততম সময়ে মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন।